H#20, Road#11 (New), 32 (Old), Dhanmondi R/A, Dhaka-1209
+880-2-41020280 +880-2-41020281 +880-2-41020282 +880-2-41020283
+880-2-58152810

প্রত্যাবাসিত অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য জরুরী ন্যায়বিচার ব্যবস্থা দাবী

মহামারির কারনে যে লক্ষ লক্ষ অভিবাসী শ্রমিক চাকুরি হারিয়েছেন এবং তাদের মধ্যে যারা প্রত্যাবাসিত হয়েছেন বা প্রত্যাবাসনের অপেক্ষায় রয়েছেন সে সকল শ্রমিকদের দুর্দশার সমাধান করার লক্ষ্যে একটি ‘জরুরী ন্যায়বিচার ব্যবস্থা’ চালু করার জন্য ২০২০ সালের ১ জুন নাগরিক সমাজ ও ট্রেড ইউনিয়নগুলো মিলে একটি আবেদন করেছিলেন। নাগরিক সমাজ ও ট্রেড ইউনিয়নগুলো মিলে সরকারগুলোকে একটি ক্রান্তিকালীন ও ন্যায়বিচার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছিলেন। এই বিচার ব্যবস্থা বিশেষ করে বিশাল পরিমান মজুরি চুরি এবং মহামারি চলাকালীন সময়ে আরও বেড়ে যাওয়া অন্যান্য বকেয়ার দাবীগুলো তুলে ধরবে বলে ধরে নেয়া হয় যাতে অভিবাসী শ্রমিকরা ন্যায়বিচার পায় এবং নিশ্চিতভাবে তাদের প্রাপ্য ক্ষতিপূরণগুলো গ্রহণ করতে সক্ষম হয়।

এর এক মাস পরে অভিবাসী শ্রমিকদের পরিস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে খারাপ হয়। বহু সংখ্যক অভিবাসী শ্রমিক ফিরে আসে, নির্বাসন এবং প্রত্যাবাসন বাস্তবে রূপ নেয়। হাজার হাজার অভিবাসী শ্রমিক কোন রকম সম্ভাবনা ও প্রত্যাশা ছাড়াই শুধুমাত্র কয়েকটি ব্যক্তিগত জিনিসপত্র নিয়ে সম্পূর্ণ খালি হাতে বাড়ি ফিরে আসে এবং আরও বেশী ঋণ ও দারিদ্রতার মধ্যে পতিত হয়। এই সংখ্যাগুলো ততক্ষণ পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত বাজারে ভ্যাকসিনের প্রাপ্যতা স্থিতিশীল না হয়।

এই মারাত্মক অপরাধের মুখোমুখি হয়ে আমরা সরকার এবং জাতিসংঘের সংস্থাগুলোকে পুনরায় তিনটি প্রধান ক্ষেত্রে তাৎক্ষনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানাইঃ

১. একটি আন্তর্জাতিক দাবী কমিশন প্রতিষ্ঠাঃ

অনেক অনেক নতুন দাবীর মধ্যে মজুরি চুরি এবং প্রবাসী অভিবাসীদের অন্যান্য অনাদায়ী দাবীগুলোর তাৎক্ষণিক সমাধান ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে একটি বিশেষ সংস্থা গঠন করা প্রয়োজন।

আন্তর্জাতিক দাবী কমিশন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আপাতদৃষ্টিতে আইনগত একটি আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ সংস্থা গঠন করতে হবে যাতে বিচারকগণ অভিবাসী শ্রমিকদের মজুরি চুরি সম্পর্কিত মামলার দ্রুত নিষ্পত্তিসহ অন্যান্য অনাদায়ী দাবীগুলোর ন্যায়সঙ্গত প্রতিকার প্রদান ত্বরান্বিত করতে পারেন। সরাসরি অভিবাসী শ্রমিক বা অভিবাসী শ্রমিকদের হয়ে কাজ করে এমন সংস্থা অথবা আইনি প্রতিনিধির কাছ থেকে মামলাগুলো গ্রহন করা যেতে পারে। পুর্বে বিদ্যমান সকল মামলাগুলো সমাধান করার জন্য নথিপত্রগুলো দাবী কমিশনে প্রেরণ করতে হবে।

আন্তর্জাতিক দাবী কমিশন আইএলও (ILO), আইওএম (IOM) এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক অংশিদারদের সাথে মিলিতভাবে পরিচালিত হতে পারে। আপাতদৃষ্টিতে আইনগত প্রকৃতির হওয়ার কারনে দ্বিতীয় বিচারক, স্বতন্ত্র আইনজীবী, আইন বিশেষজ্ঞ, অভিবাসী বিশেষজ্ঞ এবং অন্যদের মধ্যে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দাবী কমিশন গঠিত হতে পারে। এটি আরও বেশী গ্রহণযোগ্য হবে যদি উপ-কমিশনগুলো আঞ্চলিকভাবে বা জাতীয়ভাবে স্থাপন করা হয় যেখানে অনেক নতুন সমস্যার সমাধান সক্ষমতা থাকবে। উপ-কমিশনগুলোতে দাবীর বহুুবিধ বৈচিত্র্য নিশ্চিত করবে যে জাতীয় পর্যায়ে কোন অতিরিক্ত চাপ এবং ইতিমধ্যে ভারবর্ধমান বিচার ব্যবস্থা থাকবে না।

কার্যক্ষমতা সম্পন্ন উপ-কমিশন গঠন জাতীয় পর্যায়ে দাবীনামা যাচাইকরণ ও জমা দেয়ার কার্যক্রমকে প্রবাহিত করতে সহায়তা করবে। আন্তর্জাতিক দাবী কমিশনের যথাযথ কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে জাতীয় পর্যায়ে উপ-কমিশন মজুরি চুরি সহ উল্লেখযোগ্য শর্তাবলী দ্বারা আবৃত দাবীগুলোর যথাযথ মূল্যয়ন করবে।

দাবী দাখিল করার পদ্ধতিগুলো সাশ্রয়ী, সহজতর, প্রচারযোগ্য এবং বিভিন্ন ভাষায় পরিবর্তন উপযোগী হওয়া প্রয়োজন। প্রাপ্ত প্রমানপত্রগুলো পর্যালোচনার ভিত্তিতে উপ-কমিশন সকল অধিকার লঙ্ঘন এবং যথাযথভাবে নির্ধারিত ক্ষতিপূরণ তহবিলের মাধ্যমে বিতরনের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সক্ষম হবে। উক্ত দাবীগুলো পূরণে উপ-কমিশনের অনড় ও দ্রুততা থাকা প্রয়োজন।

দাবীগুলোর গ্রহণযোগ্য প্রকারভেদ
দাবী কমিশনের মজুরি চুরি এবং অন্যান্য অনাদায়ী দাবীগুলোর সমস্ত মামলা খতিয়ে দেখা প্রয়োজনঃ

  • মহামারী শুরু হওয়ার আগের অনাদায়ী পাওনা যা মহামারীর কারনে লকডাউন ও প্রত্যাবাসনের জন্য আদায় অসম্ভব হয়ে পরেছে এমন বকেয়া মজুরির দাবী।
  • মহামারী বা অর্থনৈতিক বিরূপ প্রভাবের কারনে কম মজুরি প্রদান বা মজুরি প্রদান না করা,
  • চুক্তিভিত্তিক অন্যান্য সুবিধার অর্থ প্রদান না করা (ভাতা, পরিসেবা-শেষে সুবিধা, আবাসন, ছুটি, অবৈতনিক অতিরিক্ত কাজ, চিকিৎসা ব্যয়, নিজদেশে ভ্রমনের যানবাহন ব্যয় ইত্যাদি)
  • ছাঁটাই ঘন্টা হ্রাস বা ঘন্টায় মজুরি হ্রাসের কারনে প্রত্যাশিত মজুরির ক্ষতি,
  • চুক্তিভিত্তিক অতিরিক্ত কাজের জন্য মজুরি প্রদান না করা।

২. ক্ষতিপূরণ তহবিলঃ

বিশ্বব্যাপী এবং জাতীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত দাবী কমিশন এর নির্বাহী শাখা হিসেবে কাজ করবে যা মজুরি চুরির ঘটনায় উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করে বিতরণের ব্যবস্থা করবে।
তহবিলটি জাতীয় পর্যায়ে স্থাপন করতে হবে এবং সরকারিভাবে বিতরণ নিশ্চিত করতে হবে যা ব্যক্তিগত, ব্যবসায় এবং জনহিতকর ভিত্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখবে।

সরকারিভাবে পরিণত তহবিলগুলো পরবর্তীতে উক্ত নিয়োগকর্তা এবং ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করবে যারা মজুরি চুরির ঘটনার সাথে জড়িত ছিল। কোন রকম বিড়ম্বনা ছাড়াই যেন অভিবাসী শ্রমিকরা তাদের বকেয়া মজুরি এবং অন্যান্য সমস্যার দ্রুততর সমাধান পায় তা এই জরুরী বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে। এটি আরও নিশ্চিত করবে যে, সে সকল নিয়োগকর্তা এবং ব্যবসায়ী যাদের চুক্তিগত বাধ্যবাধকতার প্রতি শ্রদ্ধা নেই তাদের এমন এক দায়বদ্ধতার মুখোমুখি করবে যে তারা দাবীগুলো মানতে বাধ্য হয়।

একটি বিশ্ব সংহতি তহবিলও প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন যাতে কখনো জাতীয় তহবিল ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে অক্ষমতা প্রকাশ করলে তা উক্ত তহবিল থেকে প্রদান করা যায়।

৩. জাতীয় বিচার ব্যবস্থার সংস্কারঃ

জাতীয় এবং বৈশ্বিক দাবী কমিশন এবং ক্ষতিপূরণ তহবিলের জাতীয় পর্যায়ে সুষ্ঠ এবং কার্যকরী বিচার ব্যবস্থার কোনও বিকল্প থাকবে না। জাতীয় বিচার ব্যবস্থা স্বতন্ত্র এবং পক্ষপাতহীন বিচার ব্যবস্থা হিসেবে বিদ্যমান থাকবে। এটি পরিবর্তনীয় বিচার পদ্ধতি বা অনুকুল আইনি প্রতিকার সুবিধার আওতাভুক্ত থাকবে না।

এখনও জাতীয় বিচার ব্যবস্থা প্রবাসী শ্রমিকদের ন্যায়বিচার প্রদানে ব্যর্থ; এই ব্যর্থতা আর স্বাভাবিক বা গ্রহণযোগ্য নয়। এমনকি সুসময়েও ন্যায়বিচার এবং আইনি প্রতিকার পেতে অভিবাসী শ্রমিকদের বেগ পেতে হয়।

জাতীয় পর্যায়ে মজুরি চুরির মামলায় বিচার পেতে অনেক অঞ্চলে চ্যালেঞ্জ বা বাধার মুখোমুখি হতে হয়। আদালত এবং থানা-পুলিশ, নথিপত্র এবং আইন লঙ্ঘনের প্রমান, মামলা মোকদ্দমার খরচ এবং সময়কাল, ভাষা ব্যবহার, নিয়োকারীর পদমর্যাদা, প্রয়োজনীয় ব্যাক্তিগত সাক্ষ্য প্রমান সংগ্রহ ইত্যাদি অভিবাসী শ্রমিকদের ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ বা বাধা হিসেবে কাজ করে। চলাফেরার স্বাধীনতায় সীমাবদ্ধতা থাকার কারনে গৃহশ্রমিকরাও ঘন ঘন মজুরি চুরির ঘটনার শিকার হয় এবং ন্যায়বিচার পেতে অতিরিক্ত বাধার সম্মুখীন হয়। রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব এবং দূর্বল পদ্ধতিগত প্রয়োগ ব্যবস্থাও অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য ন্যায়বিচারের অন্তরায়।

এই পদ্ধতিগত এবং কাঠামোগত বাধা চিরতরে অপসারণ করার জন্য বর্তমান মহামারি আমাদের নিশ্চিত সুযোগ প্রদান করেছেন। এই বিচার ব্যবস্থা নিশ্চিত করে যে, সকল বাধা বা চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠে কার্যক্ষম ও টেকসই সবার্ধিক সমাধান সম্ভব। সরকারকে অবশ্যই অভিবাসী কেন্দ্রীক বিচার ব্যবস্থা জাতীয় পর্যায়ে পুনর্নির্মাণ করতে হবে যা মহামারির দরুন আরও বেড়ে যাওয়া সমস্যাগুলো সমাধানের লক্ষ্যে নিয়োগকর্তাদের সুষ্ঠ জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে এবং সকল দুর্বলতা ও বাধা অতিক্রম করে অভিবাসী শ্রমিকদের ন্যায়বিচার পেতে স্বীকৃতি দেয়।
আমরা এখনই সরকারকে জরুরী ভিত্তিতে ‘জাতীয় বিচার পদ্ধতি’ এর সংস্কারে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানাই

মজুরি চুরি সম্পর্কিত দাবীগুলো সম্বোধন করছে এমন বৃহত্তর রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তিগুলোকে বৃদ্ধি করতে জাতীয় পর্যায়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে শ্রম আদালত স্থাপন, আদালতের ফি মওকুফ করা, মজুরি সুরক্ষা ব্যবস্থা স্থাপন, বিভিন্ন ভাষায় কর্মীদের জন্য হটলাইন পরিচালনা, আইনি সহযোগিতায় নথিপত্র প্রেরণ, আইনি পদ্ধতি সহজতর করা, প্রত্যাবাসিতদের জন্য দূরবর্তী সাক্ষ্য প্রদানের অনুমতি, অভিযোগগুলো নিবন্ধ করতে কর্মীদের উৎসাহিত করার জন্য আইনি সহায়তা প্রদান, অভিবাসী শ্রমিকদের গন্তব্য দেশগুলোতে পূর্ণ স্বাধীনতাসহ সম্মিলিতভাবে ইউনিয়ন গঠনের অনুমতি প্রদান যাতে দর কষাকষির অধিকার এবং কর্মক্ষেত্রে সহিংসতার অভিযোগে দ্রুততর পদ্ধতিতে ন্যায়বিচার পাওয়া সহজ হয়।

বিল্ডিং ব্যাক বেটার অভিবাসী শ্রমিকদের ব্যয়ে হতে পারে না

মজুরি এবং অন্যান্য দাবীগুলোর দ্রুত সমাধানের জন্য আরও শক্তিশালী ব্যবস্থার প্রয়োজন। এটি অভিবাসীদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা পরিবারের সদস্য ও সমাজ-সম্প্রদায় তাদের রেমিটেন্সের উপর নির্ভর করে এবং তাদের অর্থ উৎস দেশের অর্থনীতির স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রাখতে সাহায্য করে। ‘বিল্ড ব্যাক বেটার’ (আরও উন্নততর পুণর্গঠন/পুণর্নির্মাণ) এর জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রচেষ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

বিল্ডিং ব্যাক বেটার (আরও উন্নততর পুণর্গঠন/পুণর্নির্মাণ) এর জন্য মজুরি চুরির ঘটনার ক্ষেত্রে আমরা আর অন্ধদৃষ্টি ঘুরিয়ে যেতে পারি না। দীর্ঘদিন যাবত অভিবাসী শ্রমিকরা এই অসম্মান সহ্য করে আসছে। পরিবর্তনশীল ন্যায়বিচারের দাবীতে আমরা কাজ করছি যাতে যেকোনো উপায়ে প্রতিটি অভিবাসী শ্রমিকের জন্য তাদের প্রাপ্য পূর্ণ অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে পারি।

প্রচারে: মাইগ্রেন্ট ফোরাম এশিয়া, ক্রস রিজিওনাল ফোরাম ফর রিফিউজিস্ অ্যান্ড মাইগ্রেন্টস্, লইয়ারস্ বিয়ন্ড বর্ডারস্, সলিডারিটি সেন্টার এবং সাউথ এশিয়ান রিজিওনাল ট্রেড ইউনিয়ন কাউন্সিল